বেকারত্ব কত প্রকার ও কী কী: জানুন বেকারত্বের বিভিন্ন প্রকার এবং প্রতিকার সম্পর্কে এই আর্টিকেলে। এটি পড়লে আপনি বেকারত্বের কারণ, প্রভাব এবং সমাধান সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন, যা আপনার কর্মজীবনে সহায়ক হবে।
বেকারত্ব কত প্রকার ও কী কী
আজকের যুগে বেকারত্ব একটি গম্ভীর সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত হয়ে পড়েছে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে, বিশেষ করে আমাদের দেশে, বেকারত্বের হার অনেক বেশি। যেখানে সমাজ ও অর্থনীতির জন্য বেকারত্ব একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে, সেখানে এটি ব্যক্তিগত জীবনেও গভীর প্রভাব ফেলে। মানুষের জীবনযাত্রা, মানসিক শান্তি এবং ভবিষ্যতের পরিকল্পনার ওপর বেকারত্বের নেতিবাচক প্রভাব রয়েছে। তবে, বেকারত্বের সমস্যা সমাধানের জন্য আমাদের প্রথমে এর প্রকৃত কারণগুলো ও প্রকারভেদ বোঝা অত্যন্ত জরুরি।
বেকারত্বের সংজ্ঞা
বেকারত্ব বলতে এমন একটি পরিস্থিতি বোঝানো হয়, যেখানে চাকরির জন্য উপযুক্ত ব্যক্তি কাজ খুঁজে পাচ্ছে না। অর্থাৎ, যেসব মানুষ চাকরি করার আগ্রহী, তারা যখন কাজ পায় না, তখন তারা বেকার হিসেবে গণ্য হয়।
বেকারত্ব কত প্রকার ও কী কী?
বেকারত্বের বিভিন্ন প্রকার রয়েছে, এবং প্রতিটি প্রকারের নিজস্ব বৈশিষ্ট্য এবং কারণ রয়েছে। এই বেকারত্বের প্রকারগুলো নিয়ে বিস্তারিত জানলে, আপনি খুব সহজেই বেকারত্বের মোকাবেলা করতে পারবেন এবং এর সমাধানও খুঁজে পাবেন। নিচে বেকারত্বের প্রকারভেদ এবং তাদের সমাধান নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
ফ্রিকশনাল বেকারত্ব
ফ্রিকশনাল বেকারত্ব এমন একটি প্রকার, যা সাধারনত যখন একজন ব্যক্তি তার বর্তমান চাকরি পরিবর্তন করার জন্য নতুন চাকরি খুঁজছেন, তখন ঘটে। এই ধরনের বেকারত্ব বেশিরভাগ সময় স্বল্পকালীন হয়ে থাকে। এটি কোনো নির্দিষ্ট অর্থনৈতিক সংকটের কারণে নয়, বরং ব্যক্তি নিজেই তার ক্যারিয়ার পরিবর্তন বা নতুন সুযোগের দিকে মনোযোগ দেয়ার কারণে ঘটে।
ফ্রিকশনাল বেকারত্বের উদাহরণ: ধরা যাক, আপনি একজন শিক্ষক, কিন্তু আপনি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে, আপনি একটি অফিসে চাকরি করতে চান। তাই আপনি নতুন চাকরি খুঁজতে শুরু করেছেন। এই সময়কালটি ফ্রিকশনাল বেকারত্ব হিসেবে গণ্য হয়।
ফ্রিকশনাল বেকারত্বের সমাধান:
- ক্যারিয়ার কাউন্সেলিং
- দ্রুত চাকরি খোঁজার সুযোগ বৃদ্ধি
- চাকরির জন্য দক্ষতা ও যোগ্যতা বৃদ্ধি
সাইক্লিক্যাল বেকারত্ব
সাইক্লিক্যাল বেকারত্ব সাধারণত অর্থনৈতিক সংকটের সময়ে ঘটে। যখন অর্থনীতি দুর্বল হয়ে পড়ে, তখন উৎপাদন কমে যায়, ব্যবসা মন্দায় পড়ে এবং অনেক মানুষ তাদের চাকরি হারান। সাইক্লিক্যাল বেকারত্ব সংকটকালে দীর্ঘমেয়াদী হতে পারে, যেমন বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দার সময়।
সাইক্লিক্যাল বেকারত্বের উদাহরণ: বিশ্বব্যাপী কোভিড-১৯ মহামারীর সময়, অনেক মানুষের চাকরি চলে যায় এবং তাদের আর্থিক অবস্থা দুর্বল হয়ে পড়ে। এটি একটি সাইক্লিক্যাল বেকারত্বের উদাহরণ।
সাইক্লিক্যাল বেকারত্বের সমাধান:
- সরকারী সহায়তা ও অর্থনৈতিক প্রণোদনা
- অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং ব্যবসার উন্নয়ন
- বিনিয়োগ বৃদ্ধি
আরও পড়ুন: কোম্পানিতে ড্রাইভার নিয়োগ ২০২৪
স্ট্রাকচারাল বেকারত্ব
স্ট্রাকচারাল বেকারত্ব ঘটে যখন কোনও দেশের শিল্প বা প্রযুক্তির অবস্থা পরিবর্তন হয়। যেমন, একসময় যে কাজগুলি প্রচলিত ছিল, তা এখন আর প্রাসঙ্গিক নয় বা প্রযুক্তিগত কারণে সেই কাজগুলো অদৃশ্য হয়ে যায়। এটি দীর্ঘমেয়াদী বেকারত্বের কারণ হতে পারে এবং দক্ষতার অভাব এর মূল কারণ।
স্ট্রাকচারাল বেকারত্বের উদাহরণ: বর্তমানে অনেক অটোমোবাইল শ্রমিকের কাজ চলে গেছে কারণ রোবটিক্স এবং আধুনিক প্রযুক্তি অনেক কাজ সহজে করে ফেলছে। তাই, আগে যে শ্রমিকদের প্রয়োজন ছিল, এখন তাদের জায়গায় মেশিন ব্যবহার করা হচ্ছে।
স্ট্রাকচারাল বেকারত্বের সমাধান
- স্কিল ডেভেলপমেন্ট
- নতুন প্রযুক্তি এবং পেশা শিখতে সাহায্য
- প্রযুক্তি গ্রহণ এবং কর্মসংস্থান পুনর্বিন্যাস
সিজনাল বেকারত্ব
সিজনাল বেকারত্ব সাধারণত নির্দিষ্ট সময়ে ঘটতে পারে। এটি এমন সময়ে ঘটে, যখন কোনো কাজ বা ব্যবসা নির্দিষ্ট ঋতুর ওপর নির্ভরশীল। যেমন, কৃষি, পর্যটন, নির্মাণ কাজ ইত্যাদি। এই ধরনের কাজ সিজনাল হওয়ায় বছরে কিছু নির্দিষ্ট সময়েই বেশি কর্মী প্রয়োজন হয় এবং বাকী সময়ে কম।
সিজনাল বেকারত্বের উদাহরণ: শীতকালীন পর্যটন শিল্পের জন্য, বিশেষ করে মেঘালয়ের মতো পাহাড়ী এলাকাগুলিতে চাকরি সিজনাল থাকে। তবে গ্রীষ্মে এবং বর্ষায় এখানে পর্যটকদের সংখ্যা কম থাকায় অনেক কর্মী কাজ হারান।
সিজনাল বেকারত্বের সমাধান:
- সিজনাল কাজের সঙ্গে অন্য কাজের সম্মিলন
- ব্যবসায় নতুন নতুন উদ্যোগ গ্রহণ
- কর্মসংস্থানের উপযোগী প্রশিক্ষণ
ভলেন্টারি বেকারত্ব
ভলেন্টারি বেকারত্ব তখন ঘটে যখন একটি ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে চাকরি ছাড়েন। এটি বিভিন্ন কারণে হতে পারে, যেমন কাজের পরিবেশ ভালো না হওয়া, ব্যক্তিগত জীবন উন্নত করার জন্য চাকরি পরিবর্তন, বা নিজের ব্যবসা শুরু করার ইচ্ছা।
ভলেন্টারি বেকারত্বের উদাহরণ: ধরা যাক, একজন ব্যক্তির বর্তমান চাকরি থেকে সন্তুষ্টি না থাকলে সে ইচ্ছাকৃতভাবে চাকরি ছেড়ে দেয় এবং নতুন চাকরি খোঁজার সিদ্ধান্ত নেয়।
ভলেন্টারি বেকারত্বের সমাধান:
- জীবনের লক্ষ্য নির্ধারণ
- স্কিল আপগ্রেড করা
- ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত নিয়ে কর্মজীবন উন্নয়ন
আরও পড়ুন: একমি কোম্পানিতে ড্রাইভার নিয়োগ ২০২৪
ইনভলেন্টারি বেকারত্ব:
ইনভলেন্টারি বেকারত্ব তখন ঘটে যখন একজন ব্যক্তি চাকরির জন্য প্রচেষ্টা করেও কাজ পায় না। এটি সাধারণত অর্থনৈতিক মন্দা, কোম্পানির সংকোচন বা দক্ষতার অভাবের কারণে ঘটে।
ইনভলেন্টারি বেকারত্বের উদাহরণ: যখন কেউ দীর্ঘ সময় ধরে চাকরি খুঁজে পায় না, অথচ তার মধ্যে চাকরি করার সক্ষমতা রয়েছে, তখন এটি ইনভলেন্টারি বেকারত্ব হিসেবে গণ্য হয়।
ইনভলেন্টারি বেকারত্বের সমাধান
- অধিক দক্ষতা অর্জন
- বিভিন্ন শিল্পে চাকরি খোঁজা
- সরকারি ও বেসরকারি চাকরির সুযোগগুলো অনুসন্ধান
বেকারত্বের প্রভাব: বেকারত্ব শুধু একটি ব্যক্তির জীবনেই প্রভাব ফেলে না, এটি সমাজ ও দেশের অর্থনীতিতেও বিশাল প্রভাব সৃষ্টি করে। বেকার মানুষদের আর্থিক অস্থিরতা, মানসিক চাপ, অপরাধের হার বৃদ্ধি এবং সামাজিক অস্থিরতা সৃষ্টি হতে পারে।
বেকারত্বের সমাধান:
- উন্নত শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ
- সরকারী সহায়তা এবং নীতি গ্রহণ
- সমাজের উন্নয়নে মনোযোগ
FAQ
1.বেকারত্ব কত প্রকার?
বেকারত্ব প্রধানত ছয় প্রকার: ফ্রিকশনাল, সাইক্লিক্যাল, স্ট্রাকচারাল, সিজনাল, ভলেন্টারি এবং ইনভলেন্টারি বেকারত্ব।
2.স্ট্রাকচারাল বেকারত্ব কিভাবে কমানো যায়?
স্ট্রাকচারাল বেকারত্ব কমানোর জন্য স্কিল ডেভেলপমেন্ট এবং নতুন প্রযুক্তি শেখার গুরুত্ব রয়েছে।
3.সাইক্লিক্যাল বেকারত্ব কী?
এটি অর্থনৈতিক সংকটের সময়ে ঘটে, যখন ব্যবসা কমে যায় এবং চাকরি হারানোর ঘটনা ঘটে।
4.সিজনাল বেকারত্ব কি?
সিজনাল বেকারত্ব তখন ঘটে যখন কিছু কাজ নির্দিষ্ট ঋতুতে হয়, যেমন কৃষি ও পর্যটন শিল্প।
5.ভলেন্টারি বেকারত্ব কী?
এটি তখন ঘটে যখন কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে চাকরি ছাড়ে এবং নতুন চাকরি খোঁজে।
উপসংহার
বেকারত্ব একটি জটিল সামাজিক ও অর্থনৈতিক সমস্যা যা একাধিক প্রকারে দেখা দেয়। প্রতিটি প্রকারের নিজস্ব কারণ এবং প্রভাব রয়েছে, যা ব্যক্তির জীবনযাত্রার ওপর গভীর প্রভাব ফেলে। তবে, সচেতনতা, স্কিল ডেভেলপমেন্ট, শিক্ষা এবং সঠিক সমাধানের মাধ্যমে বেকারত্বের মোকাবেলা করা সম্ভব।
ব্যক্তিগত দক্ষতা বৃদ্ধি, নতুন প্রযুক্তি শেখা এবং সঠিক ক্যারিয়ার পরিকল্পনা গ্রহণের মাধ্যমে বেকারত্বের প্রভাব কমিয়ে আনা যেতে পারে। আমাদের উচিত, বেকারত্বের বিভিন্ন প্রকার এবং তার সমাধান নিয়ে সচেতন হওয়া এবং এই সমস্যা থেকে বেরিয়ে আসার উপায় খুঁজে বের করা।